Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ব্রেভিসের ঝড়ো সেঞ্চুরি! অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দাপুটে ৫৩ রানের জয়।

অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় টি-টোয়েন্টি: ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়াদের দাপুটে ৫৩ রানের জয়
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই আগ্রাসী ব্যাটিং, বাউন্ডারি-বৃষ্টি আর রোমাঞ্চের ঝড়। এমনই এক রোমাঞ্চকর লড়াই দেখা গেল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৩ রানের বড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিল। এই ম্যাচের নায়ক নিঃসন্দেহে তরুণ তারকা ডেওয়াল্ড ব্রেভিস, যিনি মাত্র ৬২ বলে খেললেন বিধ্বংসী ১২৫ রানের ইনিংস। তাঁর ব্যাটে ভর করেই প্রোটিয়ারা বিশাল রান সংগ্রহ করে এবং শেষ পর্যন্ত সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনে।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া সহজ জয় পেয়েছিল, ফলে ২য় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ছিল ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় কেপ টাউনের নিউল্যান্ডস স্টেডিয়ামে, যেখানে টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। উইকেট ছিল ব্যাটিং-বান্ধব, আর প্রোটিয়া ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাসে ভরপুর করে তুলেছিল এই পরিবেশ।

প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনাররা ইতিবাচক শুরু করেন। রিজা হেন্ড্রিকস ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিস মিলে পাওয়ারপ্লে-তে রান তোলেন ঝড়ের গতিতে।
রিজা হেন্ড্রিকস: ২৪ বলে ৩৮ রান, ৫টি চার ও ১টি ছক্কা।
ডেওয়াল্ড ব্রেভিস: আজকের আসল নায়ক। শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী শট খেলতে থাকেন, কভার ড্রাইভ, পুল, সুইপ—প্রতিটি শটেই ছিল নিখুঁত টাইমিং ও শক্তি।
ব্রেভিসের সেঞ্চুরি আসে মাত্র ৫৭ বলে, যা দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে অন্যতম দ্রুততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিগুলির একটি। তাঁর ইনিংসে ছিল—
১২৫ রান (৬২ বল)
১৩টি চার ও ৭টি ছক্কা
স্ট্রাইক রেট প্রায় ২০১।
ডেভিড মিলার শেষের দিকে ১৭ বলে ৩০ রানের ক্যামিও খেলেন, যা দলের স্কোরকে আরও এগিয়ে দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোর করে ২৩৪/৪—টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এক বিশাল স্কোর।

অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা পুরোপুরি ব্রেভিসের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন।
মিচেল স্টার্ক: ৪ ওভারে ৪৫ রান, ১ উইকেট
অ্যাডাম জাম্পা: ৪ ওভারে ৫২ রান, ১ উইকেট
প্যাট কামিন্স: ৪ ওভারে ৪৮ রান, ১ উইকেট
যদিও মাঝে কয়েকটি ভালো ওভার এসেছিল, কিন্তু ব্রেভিসের বিস্ফোরক ব্যাটিং থামানোর মতো পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেননি কেউই।

২৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লে-তে দ্রুত রান তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা শুরুতেই আঘাত হানেন।
ডেভিড ওয়ার্নার ১২ বলে ১৮ রান করে কাগিসো রাবাদার বলে আউট হন।
মিচেল মার্শ কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও (২৯ বলে ৪২), অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়তে থাকে।
ট্রাভিস হেড ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দ্রুত আউট হয়ে গেলে চাপ বেড়ে যায়।

প্রোটিয়া বোলাররা শৃঙ্খলাপূর্ণ লাইন-লেংথে বল করে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে রাখেন।
কাগিসো রাবাদা: ৪ ওভারে ২৮ রান, ৩ উইকেট
আনরিখ নর্টিয়ে: ৪ ওভারে ৩৬ রান, ২ উইকেট
তাবরেজ শামসি: ৪ ওভারে ৩৪ রান, ২ উইকেট
শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ১৯.৩ ওভারে অলআউট হয় মাত্র ১৮১ রানে।

যদিও অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা মন্দ ছিল না, কিন্তু ব্রেভিসের ব্যাটিং ছিল পুরো ম্যাচের সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়া মুহূর্ত। তাঁর ইনিংস কেবল রান নয়, প্রতিপক্ষের মনোবলও ভেঙে দেয়। আর বোলিংয়ে রাবাদার প্রথম স্পেল অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলে দেয়।

মাত্র ২১ বছর বয়সী ব্রেভিসকে ‘বেবি এবি’ বলা হয়, কারণ তাঁর ব্যাটিং স্টাইল কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো। এই ইনিংসে তিনি প্রমাণ করে দিলেন, ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ হবেন।

ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিদেশি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড
একটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কা (৭)

ব্রেভিস আজ অসাধারণ ছিল। ওর ব্যাটিং পুরো ম্যাচটাই বদলে দিয়েছে। বোলাররাও চাপে থেকে অসাধারণ পারফর্ম করেছে।"
আমরা জানতাম লক্ষ্যটা বড়, কিন্তু পাওয়ারপ্লেতে উইকেট হারানোই আমাদের ক্ষতির কারণ। ব্রেভিসকে ক্রেডিট দিতে হবে, ও অসাধারণ খেলেছে।

এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে স্কোর এখন ১-১ সমতা। ফলে কেপ টাউনে অনুষ্ঠিতব্য সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচ এখন ‘ফাইনাল’-এর রূপ নিয়েছে। দুই দলই শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে নামবে পূর্ণশক্তি নিয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৩৪/৪ (ব্রেভিস ১২৫, হেন্ড্রিকস ৩৮, মিলার ৩০*)
অস্ট্রেলিয়া: ১৮১ (মার্শ ৪২, স্টোইনিস ২৭, রাবাদা ৩-২৮)
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৩ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: ডেওয়াল্ড ব্রেভিস

এই ম্যাচে ব্যাট ও বলের এক অনন্য প্রদর্শনী দেখা গেল। যেখানে একদিকে ব্রেভিসের ইনিংস ছিল আতশবাজির মতো ঝলমলে, অন্যদিকে প্রোটিয়া বোলারদের শৃঙ্খলাপূর্ণ বোলিং অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপকে ভেঙে দেয়। সিরিজ এখন সমতায়, আর তৃতীয় ম্যাচে কে ট্রফি জিতবে তা দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ